Filled Under:

ত্যাগ ও অর্জনের মহিমায় মহিমান্বিত মহররম


নীল সিয়া আসমান,লালে লাল দুনিয়া
আম্মা লাল তেরি খুন কিয়া গুনিয়া।
বর্ষ পরিক্রমায় আবারও ফিরে এল ১০ মহররম,আশুরা। হিজরি নববর্ষের ১০ মহররম আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.)-এর দ্বীন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য,ইসলামী আদর্শের খাতিরে,এর পতাকাকে সমুন্নত রাখার মানসে,মহানবী (সা.)-এর আদর্শের মর্যাদা রক্ষাকল্পে,সর্বোপরি ন্যায় ও সত্যের মানদণ্ড অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে নবী করিম (সা.)-এর অতি আদরের দৌহিত্র,মা ফাতিমা (রা.)-এর নয়নমণি,হজরত আলী (রা.)-এর আদরের দুলাল হজরত ইমাম হুসাইন
(রা.) কারবালার ঐতিহাসিক রণাঙ্গনে পুত্র-পরিজনসহ শাহাদাতবরণ করেন,যা ইসলামের ইতিহাসে মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক ঘটনারূপে অঙ্কিত হয়ে আছে।
ন্যায় ও সত্যের অন্বেষায় পরিচালিত যুদ্ধকেই ইসলামী পরিভাষায় জিহাদ বলা হয়। আর জিহাদে যাঁরা আত্মোৎসর্গ করেন,তাঁরাই শহীদ। শহীদের মরণ নেই। তাঁরা অমর। এ প্রসঙ্গে পাক কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে,‘যারা আল্লাহর রাহে জিহাদ করে প্রাণ উৎসর্গ করে,তাদের তোমরা মৃত বলো না;বরং তারা জীবিত-চিরঞ্জীব’(সুরা বাকারা,আয়াত ১৫৪;আল এমরান,আয়াত ১৬৯)।
ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যুগে যুগে বহু মনীষী জিহাদে অংশ নিয়েছেন,পরিচালনা করেছেন এবং শাহাদাতবরণ করেছেন। আমাদের প্রিয়নবী (সা.) সত্যের প্রতিষ্ঠা আর অসত্যকে নির্মূল করার জন্য যেসব জিহাদ পরিচালনা করেছেন,তার মধ্যে হিজরি দ্বিতীয় সনে বদরের যুদ্ধ,হিজরি তৃতীয় সনে ওহুদের যুদ্ধ,হিজরি চতুর্থ সনে বনি মোস্তালিকের যুদ্ধ,হিজরি পঞ্চম সনে খন্দকের যুদ্ধ,হিজরি ষষ্ঠ সনে হুদায়বিয়ার সন্ধি,হিজরি সপ্তম সনে খাইবারের যুদ্ধ এবং হিজরি অষ্টম সনে মক্কা বিজয়। এই মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়েই অন্যায়-অসত্যের অন্ধকার ভেদ করে সত্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কারবালার ময়দানের যে ঘটনা তা হচ্ছে,ন্যায়-সত্যের ওপর আঘাত তথা ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নবী করিম (সা.) যে ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন,তার মূলে প্রথম কুঠারাঘাত করেন। খোলাফায়ে রাশেদিনের পর গদিনশিন আমির মুয়াবিয়া (রা.)। তিনি ইসলামী খেলাফতের বিধিবিধান লঙ্ঘন করে রাজতন্ত্র ও জৌলুশপূর্ণ রাজদরবারের বীজ বপন করলেন। এটুকু করেই ক্ষান্ত হলেন না;বরং রাজতন্ত্রের চিরাচরিত নিয়ম অনুসারে বংশানুক্রমিক রাজবংশ কায়েমের লক্ষ্যে সম্পূর্ণ অনৈসলামিক পন্থায় তদীয় পুত্র ইয়াজিদকে রাষ্ট্রের শাসনভার অর্পণ করলেন।
নবী করিম (সা.)-এর দৌহিত্র,বীরত্ব ও সৎ সাহসের প্রতীক,রাসুল (সা.)-এর আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে যিনি পরে জীবন উৎসর্গ করেন সেই ইমাম হুসাইন (রা.) মুয়াবিয়ার এরূপ অনৈতিক ও অন্যায় কাজকে বরদাশত করতে পারেননি। এতেই উপ্ত ছিল কারবালার মর্মন্তুদ কাহিনীর বীজ। ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করে,বংশানুক্রমিক রাজস্ব কায়েমের উদ্দেশ্যে ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন (রা.)-কে তার প্রতি আনুগত্য গ্রহণের নির্দেশ দেয়,অন্যথায় তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। এ অবস্থায় ইমাম হুসাইন (রা.) পরিবার-পরিজনসহ মক্কায় হিজরত করেন। এ দুঃসময়ে কুফাবাসীর পুনঃ পুনঃ আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেন এবং স্বজনসহ ৩২ জন অশ্বারোহী এবং ৪০ জন পদাতিক বাহিনী নিয়ে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফোরাত নদীর উপকূলে কারবালা প্রান্তরে যাত্রাবিরতি করতে বাধ্য হন। নিরস্ত্র ৭২ জনের ওপর সশস্ত্র পাঁচ হাজার ইয়াজিদ বাহিনীর চরম আক্রমণ শুরু হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অসত্য ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জিহাদে নিরস্ত্র স্বজন-পরিজনরা একে একে শাহাদাতবরণ করেন। তথাপি অকুতোভয় ইমাম হুসাইন (রা.) মাথা নত করলেন না। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর সন্তান-সন্ততিসহ নিজের তাজা রক্ত উৎসর্গ করে ইসলামের ঝাণ্ডা সমুন্নত রাখলেন।
সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষী নবী করিম (সা.)-এর স্নেহধন্য হজরত ইমাম হুসাইনের শাহাদাতবরণের শোকাবহ ঘটনার ধারক-বাহক হিসেবে ১০ মহররম ইসলামের ইতিহাসে ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। মহররমের ১০ তারিখ একদিকে যেমন ত্যাগের মহিমায় মহিমাণ্ডিত,অন্যদিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে এই দিনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বা হবে,তা বুকে ধারণ করে এ দিবসটি অপার গৌরবে গরীয়ান হয়ে আছে।
- অধ্যাপিকা হাফিজা ইসলাম।




Written by

We are Creative Blogger Theme Wavers which provides user friendly, effective and easy to use themes. Each support has free and providing HD support screen casting.

0 comments:

Post a Comment

© 2013 iPRESS. All rights resevered. Designed by Templateism